ব্যাঙ্কে একটা চেক জমা দিয়ে বেরুনোর সময় নন্দলালবাবুর নজরে এল, একটা স্লিপ হাতে এক বয়স্কা ভদ্রমহিলা একে ওকে কী যেন অনুরোধ করছেন। সকলেই তাকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছে। নন্দলালবাবু ওনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার?
-এই দেখ না বাবা, আমি কিছু টাকা তুলব।, কিন্তু, কাউকে দিয়ে লেখাতে পারছি না। নন্দলালবাবু হাত ঘড়িটা দেখে নিয়ে বললেন, ঠিক আছে আসুন আমার সঙ্গে, আমি না হয় লিখে দিচ্ছি। ফাঁকা একটা টেবিলে বসে নন্দলালবাবু পাশবই আর স্লিপটা ওনার কাছ থেকে নিয়ে বললেন, কত টাকা তুলবেন?
-সাত হাজার টাকা, বাবা।
স্লিপটা পূরণ করে ভদ্রমহিলাকে বললেন, নিন, এখানে সই করুন। ভদ্রমহিলার সই হয়ে গেলে নন্দলালবাবু বললেন, যান এবার কাউন্টার-এ গিয়ে জমা দিন। হাতঘড়িটা দেখে নিয়ে নন্দলালবাবু অপেক্ষা করতে থাকলেন আর টাকাটা নিয়ে ভদ্রমহিলা কাউন্টার ছেড়ে আসতেই জানতে চাইলেন টাকাটা পেয়েছেন কি না।
-হ্যাঁ, বাবা পেয়েছি।
-গুণে নিয়েছেন?
না তো বাবা গুণিনি, কথাটা বলতে বলতে নন্দলালবাবুর দিকে টাকাগুলো এগিয়ে দিলেন ভদ্রমহিলা।
-না না, আপনার টাকায় আমি হাত দেব না, আপনি গুনুন, আমি দেখছি।
ভদ্রমহিলা অতি সন্তর্পণে টাকাগুলো হাতে মেলে ধরে গুণতে লাগলেন। নন্দলালবাবু এক সময় ব্যাঙ্কে কাজ করেছেন বহুদিন। এক নজরেই উনি বুঝে নিয়েছেন, ভদ্রমহিলার হাতে দশটা পাঁচশ টাকার নোট আর বাকিগুলো একশো টাকার নোট।
-হ্যাঁ, বাবা ঠিক আছে।
-বেশ, এবার টাকাগুলো ব্যাগে ঠিক মতো রেখে বাড়ি যান।
নন্দলালবাবু দেখলেন, টাকাগুলো ব্যাগে রেখে ভদ্রমহিলা একটা ছোট পার্স বের করলেন। সেটা খুলে একটা কুড়ি টাকার নোট বের করে নন্দলালবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা রাখো বাবা, মিষ্টি খেয়ো। নন্দলালবাবু এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, হেসে বললেন, আপনি কি প্রতিবারই এভাবে টাকা দেন লোককে?
-হ্যাঁ, বাবা প্রতিবারই তো দিই।
-আপনি আমায় ভুল বুঝেছেন, আমি সে রকম লোক নই।
ভদ্রমহিলা কেমন যেন হকচকিয়ে গেলেন, একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, বেঁচে থাকো বাবা, ভগবান তোমার মঙ্গল করুন!